অবস্থান: বকশিগঞ্জ জামালপুর জেলার একটি সর্বকনিষ্ঠ উপজেলা। জেলা সদর থেকে ৩৪ কিলোমিটার দূরে সোজা উত্তর প্রান্তে দেশের শেষ সীমান্তে নয়নাভিরাম গারো পাহাড়ের গাছ গাছালী ও সবুজের সমারোহ পরিবেষ্টি বাগানের গা ঘেষে এ উপজেরা অবস্থিত। এর ভৌগোলিক সীমানা উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, পূর্বে শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলা দক্ষিণে জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলা এবং পশ্চিমে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা। আয়তন ২০৪.৩০ বর্গ কিলোমিটার তথা ৭৮.৪৪ বর্গমাইল। তাছাড়া ২৫.১৮ উত্তর অক্ষায়শ এবং ৮৯.৫৭ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে বকশিগঞ্জ উপজেলার অবস্থান। এখানকার জলবায়ু উষ আদ্র ও নাতিশীতোষ এবং স্বাস্থ্যসম্মত ও কৃষি উপযোগী। উপজেলা সদরসহ ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা ৭টি, মৌজা ২৫টি গ্রামের সংখ্যা ১৯৮টি। লোকসংখ্যা ১,৮৮,৮৮০ জন। মুসলিম ও হিন্দু প্রধান এলাকা হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে থানা ঘোষণা হওয়ার আগ পর্যন্ত বকশিগঞ্জ দেওয়ানগঞ্জ থানাধীন একটি ইউনিয়ন পরিষদ হিসেবে দেওয়ানগঞ্জ থেকে ৫টি ও শ্রীবরদী হতে ২টি সহ মোট ৭টি ইউনিয়ন পরিষদের সম্বনয়ে অপরাহ্নে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষানার মাধ্যমে বকশিগঞ্জ ইউনিয়ন থেকে বকশিগঞ্জ থানায় উন্নীত এবং এর ঠিক সতের মাসের মাথায় ১৯৮৩ সালে ১৪ইং সেপ্টেম্বর বকশিগঞ্জ উপজেলায় উন্নীত হয়।
নামকরণ: মো: আবুল কালাম আজাদ কর্তৃক জুন ২০০৪ সালে প্রকাশিত এবং জলিল খান রচিত বকশিগঞ্জের ইতিকথা ও লোকসংস্কৃতির পরিচিতি গ্রন্থের ১১ নং ১৬নং পৃষ্ঠায় বর্ণিত বিভিন্ন তথ্য ও সাক্ষ প্রমাণে অনুমতি হয় সুফি সাধক ওলিয়ে কামেল বকশি ফকির এর নামানুসারে এ প্রাচীন জনপদের নামকরণ হয়েছে বকশিগঞ্জ। বকশিগঞ্জ উপজেলার অধিবাসীদের মধ্যে শতকরা ৮০ বাগের বেশী লোক কৃষি কাজের ওপর নির্ভরশীল তারা খুবই কঠোর পরিশ্রমী। অতিথি পরায়ণ ও সহজ সরল প্রকৃতির মানুষ। গত দশকের তুলনায় বকশিগঞ্জ উপজেলার অর্থনৈতিক এবং আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপট ও অবস্থা বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটেছে কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় আশানুরূপ নহে।
শিক্ষার হার: শিক্ষার হার জেলা এবং দেশের অন্যান্য এলাকার চেয়ে এখনও সর্বনিন্মে। ইদানিং শিক্ষার আনুপাতিক হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এলাকার সর্বস্তরের মানুষ আগের চেয়ে এখন বেশি সচেতন হচ্ছেন এবং ছেলে মেয়েদের শিক্ষা লাভের প্রতি সুদৃষ্টি রাখছেন। বর্তমানে কৃষি পণ্যের উৎপাদন দ্বিগুণ হলেও জীবন যাত্রার মান ততটা সয়ং সম্পূর্ণ নয়। তবে অভাবী লোকের আনুপাতিক হার কমেছে এ কথা নির্দিধায় বলা যায়।
যাতায়াত ব্যবস্থা: এলাকার রাস্তাঘাট ও পরিবহন ব্যবস্থা বেশ উন্নত হয়েছে। নব্বই দশকের পূর্বেও উজেলা সদর থেকে সরাসরি রাজধানী শহর ঢাকার সঙ্গে পাবলিক পরিবহন ব্যবস্থা ছিল না। বর্তমানে সে অভাব পূরণ হয়েছে এবং ঢাকায় বেশ কিছু বাস চলাচল করছে। আধুনিক নগর সভ্যতা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার কারণে বর্তমানে এলাকার কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যেমন বাজারজাতকরণ এবং প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি আমদানী রপ্তানী এবং আহরণ করা সহজতর হয়েছে। এতে অত্র এলাকার আর্থ সামাজিক অবস্থা ও প্রেক্ষাপট ধীর গতিতে হলেও পরিবর্তন এবং উন্নতির পথে অগ্রসর হচ্ছে।
সামাজিক অবস্থান: এলাকার সচেতন জনগোষ্ঠী আগের মত ঘরমুখো না হয়ে দেশে বিদেশের বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরী নিয়ে এবং নিজেকে ব্যবসা বানিজ্যে সম্পৃক্ত করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে সচেষ্ট। এলাকা তথা দেওশ ও জাতির উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। যা এলাকাবাসীকেজ নতুন করে পথ চলার সাহস যোগাবে।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান: একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তৎকালীন দেওয়ানগঞ্জ থানাধীন বর্তমানে বকশিগঞ্জ থানার কামালপুর দেশের অন্যতম গেরিলা ঘাটি এবং গুরুত্বপূর্ন রণক্ষেত্র হিসেবে দেশ তথা বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিল। এই কামালপুর রণাঙ্গনে বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা সমরবিদ সেক্টর কমান্ডার কর্নেল এম এ তাহের পঙ্গু হয়েছিল। ডিসেম্বররের ১১ তারিখে বকশিগঞ্জের শেষ সীমান্ত গ্রাম টিকরকান্দীর সম্মুখে সমরে বর্বর বাহিনীর কমান্ডার মেজর আইয়ুবসহ বহু সৈন্য নিহত ও আহত হলে তাদের মনোবল ভেঙ্গে যায় এবং পালাতে থাকে। যার ফলে মুক্তিবাহিনী কর্তৃক অত্র অঞ্চল মুক্ত করার পর পরই মিত্র বাহিনী অতিদ্রুত এবং অল্প সময়ে ঢাকায় গমন এবং স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনতে সম্ভব করে তুলেছিল।
প্রফেসর ড. ইঞ্জিনিয়ার মো: মোফাজ্জল হোসেন
প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ
মুক্তিযোদ্ধা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজ
বকশীগঞ্জ, জামালপুর।