অবহেলিত উত্তর বঙ্গের পশ্চাদপদ, মঙ্গাপীড়িত জামালপুর জেলার অধীনস্থ এক অতি প্রাচীন জনপদের নাম বকশিগঞ্জ। আজকের বিংশ শতাব্দীর দ্বার প্রান্তে দাঁড়িয়ে বিশ্ব সভ্যতার সাথে তাল মিলিয়ে আমরা বকশিগঞ্জবাসি আজ যতটুকু অগ্রসর ও অগ্রগামী হয়েছি তার মূলে রয়েছে কারিগরি শিক্ষার পথিকৃত অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ইঞ্জি. মোঃ মোফাজ্জল হোসেন। সেই প্রগতি ও ক্রমবিকাশের কথা বলতে গেলে যাদের অবদান সর্বাগ্রে উলে¬খযোগ্য তাদের মধ্যে অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ইঞ্জি. মোঃ মোফাজ্জল হোসেন এর নাম এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে বিরাজ করছে আমাদের অন্তরে। বিশেষ করে শিক্ষা ও জনকল্যাণমূলক ক্রমবিকাশের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করিলে তাঁর অবদান বকশিগঞ্জ এর পরিসীমা ছাড়িয়ে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বের ইতিহাসে স্থান পাবার দাবী রাখে।
বকশিগঞ্জকে বেকারমুক্ত করার লক্ষ্যে “ কর্মমূখী শিক্ষা বেকারত্ব দূরীকরণের প্রধান হাতয়ার” এ স্লোগানকে সামনে রেখে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ছাত্র-ছাত্রীদের তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক ও কর্মমূখী শিক্ষা দিয়ে আত্মনির্ভরশীল, ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন, মানবতাবোধ ও দেশপ্রেমে উদ্দীপ্ত করে তার বৃহত্তর কর্মজীবনের প্রবেশ পথকে উন্মুক্ত করার লক্ষ্যে ৫ বছর আগে ২০১২ সালে যাত্রা শুরু করেছিল আজকের এই “মুক্তিযোদ্ধা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজ”। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদান নতুন প্রজন্মের কাছে চিরস্মরণীয় করে রাখতে মুক্তিযোদ্ধার নামে কলেজটির নামকরণ করা হয় “মুক্তিযোদ্ধা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজ”। এদেশে বেসরকারি পর্যায়ে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার পথিকৃৎ এ প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এগিয়ে চলছে সামনের দিকে, স্বীয় লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সফলভাবে পূরণ করে। কর্মমূখী শিক্ষার প্রবাদ পুরুষ অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ইঞ্জি. মোঃ মোফাজ্জল হোসেন প্রতিষ্ঠা করেন এ কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তিনি উপলব্ধি করেন কর্মক্ষম মানুষের অদক্ষতাই দেশের নাজুক অর্থনৈতিক অবস্থার মূল কারণ। কর্মমূখী শিক্ষার বাস্তবতা এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা আছে কারিগরি শিক্ষার অগ্রদূত অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ইঞ্জি. মোঃ মোফাজ্জল হোসেন স্যারের। কেননা তিনি কারিগরি শিক্ষার উপর পিএইচডি সহ অসংখ্য ডিগ্রি অর্জন করেন এবং সেই সাথে বস্ত্র দপ্তরের প্রধান পরিচালক পদে ৩ বছর ৬ মাস, বঙ্গবন্ধু টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এর অধ্যক্ষ পদে ৪ বছর এবং টাঙ্গাইল টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ পদে ২১ বছর দায়িত্ব পালন করেন এবং এগুলোর সবই কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তিনি বিষয়টি বন্ধু-বান্ধন ও আত্মীয়-স্বজনদের সাথে শেয়ার করেন। তারা নিরুৎসাহিত করেন অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ইঞ্জি. মোঃ মোফাজ্জল হোসেনকে। কারণ এখন পর্যন্তও কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ধারণা খুব একটা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বরং এই বিষয়ে অনেক নেতিবাচক ধারণাই প্রচলিত আছে। সে নেতিবাচক ধারণাকে উপেক্ষা করে একক প্রচেষ্টায় লক্ষ্য পুরণে এগিয়ে গেলেন অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ইঞ্জি. মোঃ মোফাজ্জল হোসেন। তখন সেপ্টেম্বর মাস ২০১২ সাল দুইটি ট্রেড- ডিপ্লোমা ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ও ডিপ্লোমা ইন গার্মেন্টস ডিজাইন এন্ড প্যাটার্ন মেকিং টেকনোলজি কোর্স ও ৩৮ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে বকশিগঞ্জের প্রাণকেন্দ্র, উপজেলা রোডে মাসিক ৫০,০০০ টাকা ভাড়ায় একটি বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করা হয় মুক্তিযোদ্ধা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজ (এমএসটিসি)। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে ৬ মাস মেয়াদি ৪ টি ট্রেড কোর্স- কম্পিউটার অফিস অ্যালিকেশন, ড্রেস মেকিং এন্ড টেইলারিং, ইলেকট্রিক্যাল হাউজ ওয়ারিং ও মোবাইল ফোন সার্ভিসিং চালু করা হয়। ২০১৫ সালের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরপর সমাপনী পরীক্ষায় শতভাগ পাসসহ ঢাকা বিভাগীয় সকল বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রথম স্থান এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পঞ্চম স্থান অর্জন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে আরও তিনটি নতুন ট্রেড- ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিপ্লোমা ইন ইলেকট্রক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং যুক্ত করা হয়। সাফল্যের এ বিষয়গুলো সরকারেরও নজরকাড়ে। ফলশ্রুতিতে ২০১৭ সালে “শেখ রাসেল ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব” স্থাপনে সরকার সহায়তা করেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সঠিক গুণগতমান ও সামর্থ্য, প্রাসঙ্গিকতা এবং জবপ্লেসমেন্ট, শ্রমবাজারে লোকবল সরবরাহকারী এবং কর্মসংস্থান প্রত্যাশীদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইউকে এইড (টক ধরফ)-এর ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (উঋওউ)-এর মাধ্যমে এবং সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন (ঝঋঈ)-এর যৌথ অর্থায়নে পরিচালিত এবং সুইসকন্ট্যাক্ট ও বৃটিশ কাউন্সিল-এর সাথে যৌথ অংশীদারিত্বে পৃথিবীখ্যাত শীর্ষস্থানীয় একটি ‘পরিবর্তন তৈরি’ মূলক কোম্পানি, প্যালেডিয়াম কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প “সুদক্ষ” এর সহায়তায় শতভাগ চাকরির নিশ্চয়তাসহ ২০১৭ সালে অন্তর্ভূক্তি করা হয় আরও দুটি শর্টকোর্স- সুইং মেশিন অপারেশন ও হাউজ ওয়ারিং ইলেকট্রিশিয়ান । কর্মমুখী শিক্ষাক্ষেত্রে অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ইঞ্জি. মোঃ মোফাজ্জল হোসেন এর প্রগতিশীল, দূরদর্শী ও দৃঢ় চেতনা আজকের মুক্তিযোদ্ধা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজকে দেশের বেসরকারি শ্রেষ্ঠ কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। বর্তমানে এমএসটিসির লাইব্রেরীতে প্রায় ৬০০০ বই এবং ১০০ এর ডিভিডি, সিডি ইত্যাদি সংগৃহীত রয়েছে। জীবনের কোনোকিছুই থেমে থাকে না। সব কিছুরই পরিবর্তন হয়। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার আলোকে এমএসটিসি লাইব্রেরীকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নেয়ার জন্য ডিজিটাল লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করা হয়। গ্রন্থাগার করা হয়েছে যান্ত্রিকীকরণ অর্থাৎ ঈড়সঢ়ঁঃবৎরুবফ ঝুংঃবস. ছাত্রদের জন্য রয়েছে ডর-ঋর জোন। বর্তমানে কলেজটিতে প্রায় ৩৫০ জন ছাত্রছাত্রী অধ্যয়ন করছে।
“এমএসটিসি” প্রতিষ্ঠার বছর থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাসে উপস্থিতি, আচরণ, পোশাক-পরিচ্ছদ, ক্লাস টেস্ট, কুইজ টেস্ট, মিড টার্ম ও সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং ইত্যাদি বিষয়ের আলোকে “এমএসটিসি এডুকেশন স্কলারশীপ” প্রদান করা হয়। তাছাড়া মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, প্রকৌশলী, আদিবাসির সন্তান এবং দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ আর্থিক সুবিধায় অধ্যয়নের সুযোগ রয়েছে। আবাসিক সুবিধার মধ্যে রয়েছে দূরের শিক্ষার্থীদের জন্য হোস্টেল ব্যবস্থা । নিরাপত্তা বেষ্টিত এই হোস্টেলে অপেক্ষাকৃত অল্প খরচে, মানসম্মত খাবার এবং পড়াশুনার পরিবেশ রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে রয়েছে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ, চিকিৎসা ব্যবস্থা, ডিবেট ও কালচারাল কম্পিটিশন এবং ধূমপান ও রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস।
প্রাতিষ্ঠানিল শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজ মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, মহান স্বাধীনতা দিবস ও মহান বিজয় দিবসের মত শুরুত্বপূর্ণ সকল জাতীয় দিবস সমূহ অত্যন্ত ভাবগাম্ভির্য্যের সহিত উদযাপন করে আসছে সেই প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে অদ্যাবধি।
৫ বছরের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় বর্তমানে ময়মনসিংহ,পাবনা, শেরপুর, জামালপুর, নালিতা বাড়ি, জিনাইগাতি, দেওয়ানগঞ্জ, গাইবান্দা ও সরিষা বাড়ি থেকে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীন স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী বিসিক ট্রেড কোর্স, ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিপ্লোমা-ইন-টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এসব কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে প্রতি বছর উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্রছাত্রী কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করছে। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রচার-প্রসার এবং কর্মমুখী কাজে দক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে মুক্তিযোদ্ধা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজ প্লেসমেন্ট সেল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে। প্লেসমেন্ট সেলে অত্র প্রতিষ্ঠানের সকল ছাত্র-ছাত্রীদের ডাটা হালনাগাদসহ সম্পূর্ণরূপে ডাটাবেজে সংরক্ষিত রয়েছে। এই সেলের কর্মকর্তাবৃন্দ উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বিভিন্ন নিয়োগ দানকারী প্রতিষ্ঠছানের সাথে নিবিড় যোগাযোগের মাধ্যমে চাহিদা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক সেক্টরকে সহযোগিতা করে থাকে।
বিগত বিভিন্ন সময়ে সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এ প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে আসেন। যোগ দেন এর বিভিন্ন অনুষ্ঠান, ওয়ার্কশপ বা কার্যক্রমে। তাদের চোখে মুক্তিযোদ্ধা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজ বেসরকারি সেক্টরে কর্মমুখী শিক্ষার উচ্চতরসহ সর্বস্তরের একটি আধুনিক প্রগতিশীল মডেল প্রতিষ্ঠান।
সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি ক্ষেত্রের ঘাত-প্রতিঘাত অসীম ধৈর্য, সাহস, বুদ্ধিমত্তা এবং প্রশাসনিক দক্ষতায় এগিয়ে অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ইঞ্জি. মোঃ মোফাজ্জল হোসেন। এ দেশের প্রতিটি কর্মক্ষম শিক্ষিত তরুণ-তরুণী বেকাত্বের বোঝা না হয়ে,কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশের সম্পদে পরিণত হবে এবং দেশকে নিয়ে যাবে উন্নত বিশ্বের কাতারে এবং পরবর্তীতে এ প্রতিষ্ঠান থেকেই উচ্চতর শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত হবে এ প্রত্যাশা সকলের।